আমরা না জানি কত রকমের সিনেমা দেখে থাকি, কত সিনেমার্ নায়ক নায়িকা দের নিজেদের idol মনে করে থাকি। তাদের সিনেমাতে অভিনয় করাকে নিজের বাস্তব জীবনে চলার পথ মনে করে থাকি। সিনেমা আসার প্রথম দিনই দলে দলে সিনেমা হলে গিয়ে টিকিট কেটে তাদের ছবিকে সুপার ব্লকবাস্টার বানায়। হ্যাঁ আমরাই সেই সাধারণ ভক্ত বা ফ্যান যারা আজকে নায়ক নায়িকা দের সুপার ষ্টার বানিয়েছি। কিন্তু আজকে আমি আপনাদের এমন একটা ঘটনা বলবো যেটা শুনে মনে হবে আমরা কাদের সুপার ষ্টার বানিয়ে ফেলেছি যারা নিজের একটু স্বার্থের জন্য একটা সাধারণ ফ্যানকে খুন করে ফেলে।ছোট থেকেই আমরা এমন সিনেমা দেখে বড়ো হয়েছি যেখানে নায়ক সাধারণ মানুষকে খারাপ লোকের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিচ্ছে কিন্তু বাস্তব জীবনে হয়ে উঠে নি একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেখানে নায়কই তাকে খুন করে ফেলেছে। আমি আজকে কথা বলছি কন্নড় সিনেমার নায়ক দর্শনা এর সপর্কে। কি নাম শুনে চমকে উঠলেন তো যে একজন নায়ক হয়ে একজন ফ্যানকে খুন করতে পারে কি করে ,কিন্তু এমনটা হয়েছে।
০৯ জুন ২০২৪ , বেঙ্গালুরুর কামাক্ষীপল্লী একলার একটি এপার্টমেন্টের পাশে একটি জলের ড্রেনের কাছে একটি মানুষের মৃতদেহ দেখতে পায় ওই এপার্টমেন্টের সিকিউরিটি গার্ড। কয়েকটা কুকুর তখন সেই মৃতদেহটিকে নিয়ে ছিনা ছিনি করছিলো এবং সেই দেখে ওই গার্ড লোকাল থানায় খবর দেই। তারপর পুলিশ এসে মৃতদেহটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং দেহটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করে। তারপর জানা যায় মৃতদেহটি রেণুকা স্বামী নামের একজন সাধারণ মানুষের , যার বয়স প্রায় ৩৩ বছর এবং সে একটি ওষুধের দোকানের সাধারণ কর্মচারী। পুলিশ ময়নাতদন্ত করে জানতে পারে রেনুকাস্বামীকে কেউ নৃসংশভাবে হত্যা করে যার ফলে তার থুতনি ভেঙে গেছে , যৌনাঙ্গ থেতলে গেছে ,এমনকি তার কোন ও জিভ কেটে ফেলা হয়েছে। এই সব দেখে পুলিশ বুঝে উঠতে পারে না ,একজন সাধারণ ওষুদের দোকানের কর্মচারীকে কে এবং কেন নৃশংসভাবে হত্যা করেছে । পুলিশ আরো খোঁজ করে জানতে পারে রেণুকা একজন সাধারণ মানুষ যার কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না। তাহলে কে বা কেন তাকে এই ভাবে খুন করল। পুলিশ কিছুতেই এই কেসের কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না ঠিক সেই সময় ঘটে একটি অদ্ভত ঘটনা ,
১০ জুন পরের দিন কামাক্ষীপল্লী পুলিশ স্টেশনে ৩ জন লোক গিয়ে পুলিশকে জানায় তারাই নাকি রেণুকা স্বামীকে হত্যা করে সেই ৩ জনের নাম ছিল রাঘবেন্দ্র , কার্তিক ও কেশবমূর্তি। তারা পুলিশকে বলে রেণুকার সঙ্গে তাদের টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা হয় এবং তার জেরেই তারা তাকে খুন করে। কিন্তু পুলিশ তাদের কথাকে বিশ্বাস করে না এবং তাদের ৩ জনকে আলাদা আলাদা ভাবে জেরা করেন । সাইবার ক্রাইম থেকে তাদের ফোন কল রেকডিং দেখে পুলিশ জানতে পারে তারা ৩ জনই একটা কমন নাম্বার এর সঙ্গে বিগত ২ - ৩ দিন ধরে কথা বলেছে । তারপর পুলিশ সেই নাম্বারের খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারে ওই নাম্বারটা আর কারো নয় কন্নড় সিনেমার সুপার ষ্টার দর্শনের পার্সোনাল মোবাইল নাম্বার। এই থেকেই পুলিশ বুঝে যায় সুপারষ্টার এই হত্যার পিছনে সরাসরি ভাবে যুক্ত আছে কিন্তু কেন তিনি একজন সাধারণ ফ্যানকে এই ভাবে হত্যা করলেন। এর উত্তর জানতে গেলে আমাদের জানতে হবে অন্য একটা ঘটনা।
আজ থেকে প্রায় ১১ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৩ সালে সুপারস্টার দর্শন বিয়ে করেন বিজয়লক্সমির সঙ্গে এবং তার কিছু বছর পরে তাদের একটি ছেলেও হয়। কিন্তু ৮ বছর পর ২০১১ ০ সালে বিজয়লক্সমী থানায় একটা অভিযোগ দায়ের করেন যে তার স্বামী অর্থাৎ দর্শন থাকে রীতিমতো মারধর ও নির্যাতন করেন । আর দর্শনের এই স্বভাব আজকের নতুন নয় এর আগেও তিনি হোটেলের স্টাফের সঙ্গে , প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রায় ঝামেলায় ঝড়াতেন , এমনকি ফিল্মের প্রোডিউসারকে প্রাণে মারার হুমকি ও দিয়েছেন । আর সেই সময়ই দর্শন জড়িয়ে পরে পরকীয়া সপর্কে , ফ্যাশন ডিজাইনার পবিত্রা গৌড়ায় এর সঙ্গে। আর রেণুকা স্বামীর নৃশংভাবে হত্যার পিছনের আসল কারণ হিসাবে জড়িয়ে আছে এই পবিত্রা গৌড়ায়।পবিত্রার একটি মেয়েও আছে আর এর সঙ্গেই গত ১০ বছর ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে পরকীয়ায় সম্পর্ক চালিয়ে যান দর্শন।তারপর ২০২৩ সালে পবিত্রা তার মেয়ের জন্মদিনে সোশ্যাল মিডিয়া তে একটা ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। আর তাতে দেখা যায় অভিনেতা দর্শন সেই মেয়েকে স্নেহের সঙ্গে আদর করছেন। সেই থেকেই সবাই তাদের সম্পর্কটা জানতে পারে এবং এই বছর ঝামেলাটা আরো বেড়ে যায় যখন তাদের একসঙ্গে ঘোরাঘুরির ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করতে শুরু করে পবিত্রা।আর এই সব ছবি আর ভিডিও দেখে দর্শনের ভক্তরা রীতিমতো চমকে যায় যে সুপারস্টারকে তারা তাদের আইডল মনে করে সেই সুপারস্টারই নিজের বাড়ির বৌ ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে আছে। আর এই ভক্তদের মধ্যে রেণুকা ছিল একজন যে এই বিষয়টাকে মেনে নিতে পারছিলো না।
তারপর রেণুকা একটা ফেক প্রোফাইল বানিয়ে পবিত্রাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে গালিগালাজ করা শুরু করেন।কিন্তু পবিত্রা এই বিয়ষটাকে এড়িয়ে চলতে থাকে। ক্রমাগত যখন এই ভাবে গালিগালাজ চলতেই থাকে তখন একদিন পবিত্রা খুব রেগে গিয়ে সেই ফেক প্রোফাইলটার নাম নালিশ করেন দর্শনের কাছে।আসলে রেণুকা চাইছিলো পবিত্রা দর্শনের জীবন থেকে চলে যায় আর তার ভালোবাসার সুপারস্টার আগের মতো নিজের জীবনে ফেরত চলে আসে। কিন্তু সে কি জানতো যে তার এই সুপারস্টাই তাকে খুন করবে। তারপর দর্শন তার এক কর্মচারী পবনকে নির্দেশ দেয় পবিত্রা নামের একটা ফেক প্রোফাইল বানাতে এবং আরো জানায় যে ভাবেই হোক না কেন ওই ফেক প্রোফাইলটার আসল পরিচয় বের করতে।
ঠিক তাই হলো কিছু দিনের মাথায় সাধাসিধে রেণুকা সেই ফেক পবিত্রার একাউন্টের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নিজের আসল নাম ও তার আসল ঠিকানা জানিয়ে দেয়।তারপর আসে সেই ভয়ানক দিন , দর্শন তার ফ্যান ক্লাবের প্রেসিডেন্ট রাঘবেন্দ্রকে ৩০ লক্ষ টাকা দেয় রেণুকা স্বামীকে কিডন্যাপ করার জন্য।
৮ জুন ২০২৪ সকাল বেলা যখন রেণুকা ওষুধের দোকান যাওয়ায় জন্য বের হয় ঠিক তখনই তাকে অপহরণ করে নিয়ে আসা হয় বেঙ্গালুরুতে। দিয়ে তার সঙ্গে শুরু হয় নৃশংসতার আসল খেলা। বেঙ্গালুরুর আর আর নগরের একটা এপার্টমেন্টে রাঘবেন্দ্র নিয়ে আসে রেণুকাকে। তারপর তাকে বেঁধে রেখে লাঠি ,রড কখনও আবার চামড়ার বেল্ট দিয়ে মারতে থাকে ,মেরে মেরে থাকে আধমরা করে দেয়। রেণুকা যাতে মারের জেরে চিৎকার না করতে পারে তারজন্য তার জিভ কেটে নেওয়া হয়।তারপর একটু সন্ধ্যের দিকে দর্শন, তার গার্লফ্রেন্ড পবিত্রা ও তার বাকি সঙ্গীদের সঙ্গে সেই এপার্টমেন্টে যায়। সেই সময় দর্শনকে দেখে মনে সাহস পায় রেণুকা, সে ভাবতে থাকে যেমন সিনেমাতে হিরো এসে ভিলেনের কাছে থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়ে নেয় ঠিক তেমনই হয়তো আজকে দর্শন তাকে বাঁচিয়ে নিবে । কিন্তু তার এই ধারণা সম্পূর্ণ ভূল প্রমাণিত হয়ে গেলো।আসলে দর্শন তাকে বাঁচাতে আসে নি বরং তাকে আরো নৃশংসভাবে মারতে এসেছে। রেণুকার যখন পোস্ট মার্টাম করা হয় তখন জানা যায় তাকে খুব জোরে একটা ঘুসি মারা হয় , তাতে তার থুতনি ভেঙ্গে, আর তার সঙ্গে এটাও জানা যায় যে তার যৌনাঙ্গে এতজোরে লাথি মারা হয় যে ওর যৌনাঙ্গ থেঁতলে যায়। এর সঙ্গে সঙ্গে তাকে কারেন্টের শক ও দিতে থাকে দর্শন ও তার দলবলেরা। আর এই দৃশ্য সাক্ষী রেখে মজা নিতে থাকে পবিত্রা।আর এই ভাবেই মরতে হয় একজন সাধারণ ভক্ত রেণুকা স্বামীকে।
এই পুরো ঘটনার সাক্ষী হয় দর্শনের নিজের ড্রাইভার। আপনারা আরেকটি বিয়ষ জেনে অবাক হবেন, যে রেণুকা স্বামীকে এই ভাবে হত্যা করা হলো তার কিছুদিন আগেই বিয়ে হয়েছিল এবং তার স্ত্রী গর্ভবতী ছিল। তো এই খুনি সুপারস্টার নিজের ইগো পূরণ করার জন্য এক স্ত্রীকে বিধবা করলো আর এক সন্তান যে এখন ও পৃথিবীতে আসে নি তাকে পৃত্রহারা করলো।
পুলিশ সূত্রে জানা যায় যে এই কেসের জন্য প্রায় ১৬ জনকে ক্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ হাই কমিশন জানায় কোনো পলিটিক্যাল পার্টি দর্শনকে এই কেস থেকে বাঁচাতে পারবে না এবং তার যেন আজীবন কারাবাস হয় সেই বাবস্তায় করবে পুলিশ।
এই পুরো ঘটনা শুনে আমরা বুঝতে পারছি যে অভিনেতারা সিনেমাতে শুধু অভিনয়ই করে বাস্তবে তারা এক একটা রাক্ষস,আমরা নিজের টাকা খরচা করে তাদের সিনেমা দেখে তাদেরকে সুপারস্টার বানাচ্ছি আর সেই সুপারস্টারই নিজের ফ্যানকে খুন করছে। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠছে আমরা কাদের সুপারস্টার বানাচ্ছি , কাদেরকে ভগবানের মতো পুজো করছি,কাদেরকে অন্ধের মতো ভালোবাসছি। তো এই বার থেকে কাউকে অন্ধের মতো ভালোবাসার আগে এক হাজার বার ভেবে দেখবেন।
*পুরো ঘটনাটা অনেক সোশ্যাল মিডিয়াতে , খবরের চ্যানেলে , YOU TUBE এ, দেখানো হয়েছে। (Source)
Please Visit : http://www.sabamonsur.com